বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:আবার পুলিশ অফিসারদের কড়া সমালোচনা করলেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বললেন, ‘পুলিশ অফিসারদের একাংশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন। বিরোধী দলের সাংসদ ও বিধায়কদের বিরুদ্ধে তাঁরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণ করছেন।’ শুধু তাই নয়, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান সেই অফিসারদের সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, এই অফিসারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিন রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেছেন। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘রাজ্যের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পুলিশও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। সমস্ত ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এখনও কোনও সাড়া দেননি। রাজ্যপাল ডাকলে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবিধানিক কর্তব্য হল, রাজভবনে এসে রিপোর্ট করে যাওয়া। আমি আশা করব, মুখ্যমন্ত্রী সেই কর্তব্য পালন করবেন।’ এর পরই তিনি বেশ কড়া ভাষায় পুলিশের সমালোচনা করে টুইট করেন। লেখেন, ‘বিরোধী নেতা বা সাংসদদের বিরুদ্ধে জেমস বন্ডের (০০৭) ঠান্ডা মাথার খুনির মতো আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। রাজ্যপাল হিসেবে আমার দায়িত্ব সেই কাজ বন্ধ করা। সেই কাজ বন্ধ করতে আমার যা–যা করা উচিত, তা–ই করছি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যথাসময়ে সব টের পাবেন।’
এখানেই থেমে যাননি তিনি। আরও লিখেছেন, ‘আচরণে আইপিএস অফিসারদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষ হওয়াই উচিত। কিন্তু তাঁরা নিজেদের মর্জিমাফিক আইনের ব্যবহার করে যাচ্ছেন।’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে টুইট করেছিলেন রাজ্যপাল। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, এই রাজ্যে পুলিশের আচরণ পুরোপুরি দলদাসের মতো। বিরোধী দলগুলির নেতা ও নেত্রীদের সঙ্গে রীতিমতো দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যাও চান তিনি। যদিও রাজ্যের তরফে রাজ্যপালের সেই মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
তবে শনিবার কিন্তু রাজ্য সরকারের হয়ে মন্ত্রী তাপস রায় মুখ খুলেছেন। তিনি সরাসরি রাজ্যপালের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের দেশের ছটা রাজ্য পঙ্গপালের আক্রমণে অস্থির হয়ে উঠেছে। পঙ্গপালের উপদ্রব ঠেকাতে সেই রাজ্যগুলি এখন ব্যস্ত রয়েছে। তেমনই আমরাও ব্যস্ত রয়েছি। আমাদের এখন রাজ্যপালের উপদ্রব ঠেকাতে হচ্ছে। কিছু করার নেই।’ মন্ত্রী তাপস রায়ের এই সমালোচনার জবাব অবশ্য রাজভবন থেকে আসেনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও রাজ্যের সাধারণ মন্ত্রী থেকে শাসক দলের নেতারা হামেশাই এখন প্রকাশ্যে রাজ্যপালের সমালোচনা করছেন।
সরকার ও রাজ্যপালের এমন বিরোধ যে গণতন্ত্রের পক্ষে অনভিপ্রেত, সে কথা রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা অনেকবারই বলেছেন। কিন্তু রাজ্যপাল যেমন সরকারকে বিব্রত করার পথ থেকে সরে আসেননি, তেমনই রাজ্য সরকারের মন্ত্রী বা শাসক দলের নেতারাও রাজ্যপালের সমালোচনাও বন্ধ করেননি। ফলে রাজ্যে এখন নবান্ন ও রাজভবনের বিরোধ অব্যাহতই রয়েছে। এই বিরোধের নিষ্পত্তি কী করে হবে, সেটাই এখন দেখার।